ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসের অন্যতম অস্থিতিশীলতার মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা লিজ ট্রাস। দায়িত্ব গ্রহণের ৪৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে দেওয়া ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী তিনি। দেশটির ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে কম সময় অর্থাৎ মাত্র ১১৯ দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন জর্জ ক্যানিং। ১৮২৭ সালে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের স্বল্প সময় প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড ছিল তার।
কিন্তু পদত্যাগ করায় এখন ব্রিটেনের সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার রেকর্ড গড়লেন লিজ ট্রাস। যে পাঁচ কারণে পদত্যাগ করলেন লিজ ট্রাস…
• গত ৬ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ব্যয়বহুল পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন লিজ ট্রাস। যদিও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর এই পরিকল্পনা ১০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
• কোয়াসি কোয়ার্টেং যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার নতুন অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে এক ‘মিনি-বাজেট’ ঘোষণা করেন। তহবিল সংগ্রহের কোনও ব্যবস্থা ছাড়াই আগামী ছয় মাসের জন্য ৬৭ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি প্রকল্প উন্মোচন করেছিলেন তিনি। তার এই মিনি বাজেট নিয়ে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
• নিরেট অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে কোয়ার্টেং দেশটিতে কর হ্রাসের ঘোষণা দেন। এর ফলে পাউন্ডের ব্যাপক পতন ঘটে এবং যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা রাজনৈতিক অগ্নিকুণ্ডলীর মুখোমুখি হয়। যদিও কোয়ার্টেং কর কমানোর জন্য আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
• সরকারের তীব্র সমালোচনা আর রাজনৈতিক বিতর্কের পর লিজ ট্রাস তড়িঘড়ি করে আয়করের শীর্ষ হার নিয়ে পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত বাতিলে বাধ্য হন। রাজনৈতিক তুমুল বিতর্কের মুখে মাত্র ৩৮ দিন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন কোয়ার্টেং।
•অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও ট্রাসের সংকটের সমাধান করতে পারেনি। বরং অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে ট্রাস এবং অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সাথে বিরোধের পর বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা বাভারম্যান পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের ঘোষণায় তিনি বলেন, লিজ ট্রাস নেতৃত্বাধীন সরকার সম্পর্কে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ রয়েছে তার।
অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, টরি এমপিদের বিদ্রোহ ও সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতারাও ট্রাসের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাত্র ছয় সপ্তাহ দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় লিজ ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নতুন প্রধানমন্ত্রী আগামী সপ্তাহের মধ্যে নেতৃত্ব নির্বাচন সম্পন্ন হবে।